জনাব মোঃ আব্দুল হক, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলাধীন ১১নং লংগাইর ইউনিয়নের চাইরবাড়িয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ০১ নভেম্বর ১৯৪৮ খ্রি. জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত হোসাইন মাওলানা দক্ষিণ গফরগাঁও এবং শ্রীপুর উপজেলায় ইসলামিক বক্তা ও ধর্ম প্রচারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং মাতা মৃত মালেকা আক্তার ছিলেন গৃহিণী। জনাব মোঃ আব্দুল হক শৈশবে খুবই ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন ও সেই সাথে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবেও তার নাম ডাক ছিল। তিনি শিশু কাল থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে অনুপ্রানিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিজের আদর্শ হিসেবে মানতেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৬৪ সালে মশাখালী কায়েদা আজম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে SSC পাস করেন অত:পর ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে HSC এবং ১৯৭১ সালে B.Sc পাস করেন। তিনি পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজিতে পারদর্শী ছিলেন তার এই পারদর্শীর খবর জানতে পেরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ তাকে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে উঠে পড়ে লাগে এবং এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৭ সালের ০৩ অক্টোবর শ্রীপুর থানা হেড কোয়াটার পাইলট হাই স্কুলে প্রথমবারের মতো শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। অতপর তিনি ১৯৬৮ সালে তিনি কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ১৯৭৩ সালে কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও আলিমুননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৭ সালে হাতেমতাই উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ও ১৯৭৯ সালে মশাখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষকতা করে সর্বশেষ তিনি ১৯৮৫ সালের ০১ মার্চ শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ব্রিটেনের রাণী ২য় এলিজাবেদ ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফরকালে বৈরাগীর চালা উচ্চ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। জনাব মোঃ আব্দুল হক প্রধান শিক্ষক থাকা কালীন তার আমন্ত্রণে ব্রিটিশ হাই-কমিশনার মি. পিটার ফাওলার এবং এডুকেশন এ্যাডভাইজার মি. ডেভিড ক্লাক ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন এবং কুইন এলিজাবেদ কমপ্লেক্স এর ফাউন্ডেশন স্টোন উদ্ধোধন করেন যাহা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। তিনি ২০০৮ সালে বৈরাগীরচালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহন করেন। অবসর গ্রহণের পূর্বে বিগত ২০০৭ সনের জরুরী অবস্থা কালের প্রেক্ষাপটে জনাব মো: আব্দুল হক, বি.এসসি-বি,এড, তিনি তার ব্যাক্তিগত কাজে ১৬ই জুলাই ভোর বেলায় তার বাড়ী থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের একটি রেস্তোরায় চা নাস্তা করার কালে টিভি নিউজে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী জাতির জনক কন্যা শেখ হাসিনার অপ্রত্যাশিত এবং আকস্মিক গ্রেফতারের দৃশ্য দেখে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে যান। অপর দিকে রেস্তোরায় থাকা জনৈক লোকজন ও বাহিরের অনেক লোকজনের মুখে আর আওয়ামীলীগ নেই, শেখ হাসিনা নেই, বঙ্গবন্ধুও নেই বলে হাসিতে হাসিতে আনন্দ উল্লাসে মত্ব হয়। যা দেখে জনাব মো: আব্দুল হক দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ময়মনসিংহে আর না গিয়ে বরং বাড়ী ফিরেন এবং মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করেন যে, তিনি তার নিজের বসত ভিটাতেই তার শৈশব কালের আদর্শ এবং দেশ ও জাতির প্রতিষ্ঠিতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিদর্শন স্মরণ করে রাখার লক্ষ্যে ২০০৭ সনের ১৫ই আগস্ট প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি তথা ডিগ্রী পর্যন্ত এমনকি উহাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করণের অভিপ্রায়ে “দি ফাদার অব দি ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ” শিরোনামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিতির লক্ষ্যে উক্ত দিনেই উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক অনুমতির ফি বাবদ প্রথমত ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবর ৫১০০/- (পাঁচ হাজার একশত) টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করেন। যার নং- ২৮১২৩৭৬ তারিখ: ১৫/০৮/২০০৭ খ্রি. এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যথাযথ আবেদনটি দাখিল করে বোর্ড থেকে প্রাপ্ত রশিদ নং- ৪৮৪৬, তারিখ: ২১/০৮/২০০৭। যাহা কিনা এলাকায় প্রকাশিত হওয়ায় অনেক নেতাকর্মীসহ আরও অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভয়ে জনাব মো: আব্দুল হককে এড়িয়ে চলেন এবং নানাবিদ ভয়ভীতি প্রদর্শন করার ছাড়াও তাকে নিয়ে অনেকেই উপহাস পরিহাস ও বিদ্রোপ করে থাকেন। কিন্তু উহা সত্বেও তিনি বিচলিত না হয়ে জনাব আব্দুল হক সকল ভয়কে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভূক্ত করা এবং শেখ হাসিনাকে মুক্তির দাবী জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে তার অনড় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করার লক্ষ্যে উহার অনুকূলে আরো ৭০০০/- (সাত হাজার) টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট, সোনালী ব্যাংক লি: গফরগাঁও শাখা থেকে সংগ্রহ করেন ড্রাফট নং- ৪৬১২৬২৫ বোর্ডে যথাযথ আবেদনসহ জমা করেন। দাখিলক্রমে বোর্ড থেকে প্রাপ্ত রশিদ নং- ৫৬৬৪ তারিখ: ১৪/০৫/২০০৯ খ্রি.। অত:পর তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীর নিয়ে অস্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালু করে থাকেন। অত:পর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বরাবর যথাক্রমে ২৪/০২/২০১০খ্রি. ও ০৭/০২/২০১১খ্রি. তারিখের স্বাক্ষরিত তার যথাযথ আবেদনের ক্ষেত্রে মাননীয় জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ মহোদয়ের প্রেরিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি জনাব মো: আব্দুল হক বরাবর উক্ত প্রতিষ্ঠান সংক্রান্তে নামকরণের অনুমতি প্রদানক্রমে একটি পত্র প্রেরণ করেন। পত্র নং- ববস্মৃতি ট্রাস্ট-১/২০১১- (২৫১); তারিখ: ০৯/১০/২০১১ইং। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর উক্ত প্রতিষ্ঠান সংক্রান্তে উপরোক্ত দাখিলকৃত টাকার অনুকুলে যথাক্রমে আরও ১০০০/- (এক হাজার) টাকা এবং ৩০০০/- (তিন হাজার) টাকা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বরাবর দাখিল করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জনাব মো: আব্দুল হক, বি.এসসি-বি.এড তাঁর অনুমতিক্রমে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আমিন খসরু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ গফরগাঁও এর প্রথম সংসদ সদস্য জনাব মো: আবুল হাসেম তাদের সভাপত্তিত্বে যথাক্রমে ০৬/০৩/২০০৯খ্রি. ও ২১/১০/২০১১খ্রি. এবং ১২/১২/২০১১খ্রি. তারিখে সভা অনুষ্ঠিত হয়। অত:পর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মো: আব্দুল হক, বি.এসসি-বিএড ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের শিক্ষকতার অর্জিত অর্থে এবং তার ছেলে মেয়েদের অর্থায়নে ৭/৮ ফিট মাটি ভরাটসহ প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ৪৭টি আরসিসি পিলারের মাধ্যমে ০৩ তলা ফাউন্ডেশনের ভিত্তিতে ০৭ই মার্চ ২০১৩ ইং তারিখ নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়। কিন্তু এর দেড় মাস পর ১৫ই মে ২০১৩ইং তারিখ বুধবার দিবাগত মহাসেনের রাত তার বাড়ীতে অজ্ঞাতনামা মুখঢাকা ১৬-১৭ জনের মাধ্যমে এক রহস্যময়ী ডাকাতি হয় এবং তার পরিবারের সকলকে মারধরসহ প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। যা কিনা ১৭ মে ২০১৩ইং তারিখ দৈনিক স্বজন ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পাগলা থানায় উক্ত বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয় মামলা নং- ০১, তারিখ: ০১/০৬/২০১৩ইং। ইহা স্বত্বেও তিনি তার পরিবার পরিজনদের সৎ সাহসিকতার ভিত্তিতে প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থায়ী দাতা যথাক্রমে (ক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অব: প্রধান শিক্ষক জনাব মো: আব্দুল হক, বিএসসি-বিএড (খ) প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী অব: শিক্ষক জনাব মাহমুদা খাতুন, বিএ (গ) প্রতিষ্ঠাতার জ্যৈষ্ঠ কন্যা জনাব ইসরাত জাহান ফরিদা ইয়াসমিন (প্রধান শিক্ষক) (ঘ) প্রতিষ্ঠাতার দ্বিতীয় কন্যা জনাব শাগুপ্তা নাসরিন (উপাধ্যক্ষ) (ঙ) প্রতিষ্ঠাতার ছেলে জনাব মো: জাকির হোসেন (অধ্যক্ষ) (চ) প্রতিষ্ঠাতার কনিষ্ঠ কন্যা জনাব কাউসার জাহান (সহ: শিক্ষক) করে অবশিষ্ট নির্মাণ কাজের ১ম তলার নির্মাণকাজ সম্পনক্রমে ৪৬তম বিজয় দিবস; ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬খ্রি. তারিখ রোজ শুক্রবার ১৫৫, ময়মনসিংহ-১০ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, এর মাধ্যমে শুভ উদ্ভোধনক্রমে পহেলা জানুয়ারি ২০১৭খ্রি. তারিখ থেকে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়ে অদ্যাবদি সর্বত্র সম্মানিত সমাদিৃত অবস্থায় বিদ্যমান।জনাব মোঃ আব্দুল হক, বিএসসি-বিএড জীবনের শেষ সময়ে বার্ধক্য জনিত অসুস্থ্য হয়ে তার নিজ বাড়ীতে বসবাস করেন এবং ৩১ আগস্ট ২০২৪খ্রি. তারিখ তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাহি রাজিউন)। তার মৃতদেহ কলেজের উত্তর পাশে সমাহিত করা হয়।